উদ্ভিদের কৃত্রিম প্রজনন (Artificial Reproduction of Plants) প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মানুষ যখন চাষাবাদ শুরু করে তখন তাকে তার প্রয়োজনীয় উদ্ভিদ নির্বাচনের (selection) মাধ্যমে সেগুলোকে রোপণ করতে শিখেছে। এসব নির্বাচিত উদ্ভিদ আরও উন্নত করতে মানুষ নানা ধরনের কৌশল উদ্ভাবন করেছে। বিজ্ঞানী Camerarius (১৬০৪) প্রথমে কিছু উদ্ভিদের মধ্যে পরাগায়ন নিয়ন্ত্রণ কৌশল উদ্ভাবনকরেন। এর মাধ্যমে তিনি কয়েকটি উদ্ভিদের পুষ্পের স্ত্রী ও পুং অংশ চিহ্নিত করে প্রজনন কৌশল আবিষ্কার করেন। এ কৌশল লাগিয়ে Kocircuter (১৭৬১) বেশ কিছু উদ্ভিদের (Dianthus, Nicotiana, Hyoscymus) সংকর উদ্ভিদ উৎপাদন করে চমক সৃষ্টি করেন। এরপর মেন্ডেলীয় ধারণা প্রতিষ্ঠিত হলে এর ধারার অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হয় । (দুটি বিসদৃশ্য নির্বাচিত উদ্ভিদের মধ্যে যেখানে প্রাকৃতিক উপায়ে পরাগায়ন ও প্রজনন ঘটানো সম্ভব সেখানে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে পরাগায়ন ঘটিয়ে উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন সাধন করে উন্নত প্রকরণ বা জাত সৃষ্টি করাকে উদ্ভিদের কৃত্রিম প্রজনন বলে ।
কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়াঃ
১. প্যারেন্ট নির্বাচন (Selection of parents) : সংকরায়নের জন্য সঠিক উদ্ভিদ নির্বাচন এই প্রক্রিয়ার প্রথম কাজ । এ কাজে সতেজ ও সবল উদ্ভিদ নির্বাচন বাঞ্ছনীয় ।
২. প্যারেন্টের স্ব-পরাগায়ন (Selfing of parents) : এ পর্যায়ে নির্বাচিত প্যারেন্টের মধ্যে স্ব-পরাগায়ন ঘটানো হয়।
৩. ইমাস্কুলেশন (Emasculation) : সংকরায়নের টি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ প্রক্রিয়ায় পরাগধানী রিপুষ্ট ও পরিপক্ক হওয়ার পূর্বেই স্ত্রীউদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত ছেলে উভলিঙ্গ ফুল হতে পুংকেশরগুলো অপসারণ করা হয়। এভাবে (উভলিঙ্গ ফুলকে পুরুষত্বহীন করার পদ্ধতিকে ইমাস্কুলেশন বলে।
৪. ব্যাগিং (Bagging) : ইমাস্কুলেশনের পর ঐ উদ্ভিদগুলোর ফুলসহ বিটপের অংশ পলিথিন ব্যাগ দিয়ে আবদ্ধ করে রাখা হয়, যাতে পর-পরাগায়ন ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা পায় ।
৫. ক্রসিং (Crossing) (নির্ধারিত পুরুষ ফুলের পরাগধানী হতে পরাগরেণু সংগ্রহ করে সেগুলোকে ইমাস্কুলেটেড স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থাপন করা হয়। এ প্রক্রিয়াকে ক্রসিং বলে । এ কাজের সময় স্ত্রী ফুলের ব্যাগটি সাময়িকভাবে সরিয়ে ফেলা হয় এবং ক্রসিং-এর পর সেটি পুনরায় স্থাপন করা হয়।
৬. লেবেলিং (Labelling) : ক্রসিং এর পর পরই ঐ ফুলগুলোকে ট্যাগ দিয়ে বেঁধে চিহ্নিত করে রাখা হয়। এতে ইমাস্কুলেশনের তারিখ, ক্রসিং এর তারিখ, উদ্ভিদের বিবরণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে।
৭. বীজ সংগ্রহ (Harvesting of seeds) : ফল পরিপক্ক হলে ব্যাগ খুলে ফল কেটে এনে তা থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয়। বীজগুলো শুকিয়ে লেবেলসহ সংরক্ষণ করতে হয়।
৮. বীজ বপন (Broadcasting of seeds) : পরবর্তী মৌসুমে জমিতে বীজ বপন করা হয়।
৯. F, -বংশধরের উদ্ভব (Raising of F1 generation) : পরবর্তী জনন ঋতুতে সংরক্ষিত বীজগুলোকে বপন করে যেসব উদ্ভিদ পাওয়া যায় তারা সকলেই সংকর (hybrid)। কারণ তাদের পিতৃ ও মাতৃ উদ্ভিদের জিনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ছিল পৃথক ধরনের। এ বংশের উদ্ভিদগুলোকে F1-বংশধর বলা হয়।
১০. F -বংশধরের ব্যবহার ও নতুন প্রকরণ সৃষ্টি ( Handling of F1-generation and raising of new variety) :(F) বংশধরের দুটি উদ্ভিদের মধ্যে ক্রস করিয়ে যেসব উদ্ভিদের সৃষ্টি হয় সেগুলোর নাম হয় F♭-বংশধর। একই পদ্ধতিতে কয়েক প্রজন্ম (generation) ধরে এভাবে সংকরায়ন করতে করতে একটি নতুন প্রকরণ (variety)-এর জন্ম হয়।
আরও দেখুন...